'মা'

মা'কে নিয়ে অনেক লেখা পড়লাম। এক লাইন,
দু লাইন বা কয়েক লাইনের লেখা পড়েছি। সবাই
প্রথমে কিংবা শেষে একটি বাক্য জুড়ে দিয়েছেন—
এদিনে মা তোমায় মনে পড়ে। তাঁরা 'মা দিবস'-কে 
ইঙ্গিত করেছেন।
হ্যাঁ! মা'কে নিয়ে লিখতেই হবে। লিখুন। গদ্য, পদ্য,
প্রবন্ধ কিংবা উপন্যাস লিখুন। বিশাল বিশাল বই লিখুন। মা'কে নিয়ে দিস্তা দিস্তা কাগজ লিখে ভরে ফেলুন।আবেগ,ভালোবাসা প্রকাশ করুন, করতেই
হবে।
'মা' যে আমার চোখের মণি। মণিমুক্তার চেয়ে দামী,
দিলাকাশের তারা,রক্ত কণিকায় মিশে আছেন তিনি,
তাঁকে নিয়ে লিখবেন, না তো কাকে নিয়ে লিখবেন?
তবে আপত্তি অন্য জায়গায়। যখন দেখি মে মাসের
দ্বিতীয় রবিবার মা'কে নিয়ে লিখছেন তখন মারাত্মক
খারাপ লাগে। আপনাকে যথেষ্ট অবিবেচক মনে হয়।
বড্ড বিরক্ত হতে হয়।
আরে ভাই! প্রতিটি দিবসের পিছনে ছোট খাটো
ঘটনা লুকিয়ে থাকে। তেমনি মা দিবসের আড়ালেও
কিছু রয়েছে। হেতু ছাড়া কোন কিছুই পালিত হয় না।
হেতুটা কী,জেনেছি, মা দিবসের বিস্তর ইতিহাস তুলে
ধরে লেখা বড় করতে চাই না। তবে এতটুকু, প্রাচীন
ক্যাথলিক খ্রিস্টানরা গ্রিক দেবতাদের মধ্যে দেবী
সেবিলের উদ্দেশ্যে একটি ধর্মীয় উৎসব পালন
করতো।
এ উৎসবটি মায়েদেরকে উৎসর্গ করে পালিত হতো।
সেদিন তারা পূজার্চনা করতো। মায়েদের সাথে উত্তম
আচরণ করতো। গোলাপিফুল দিয়ে মায়েদেরকে
শুভেচ্ছা জানাতো।
এদিনটি মায়েদের জন্য বরাদ্দ ছিল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্রের আনা মেরী জার্ভিস ১৯১২ সালে
প্রতিষ্ঠা করেন মাদার'স ডে ইন্টারন্যাশনাল
অ্যাসোশিয়েশন (আন্তর্জাতিক মা দিবস সমিতি)
এবং "মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার" আর "মা দিবস"
এসব শব্দ বহুল প্রচার করেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কংগ্রেস দ্বারা দিনটিকে সরকারি
ছুটির দিন হিসাবে অনুমোদন করার জন্য বিল
পাশের সময় আইনে এই প্রচারণারই সাহায্য নেন
মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন এবং অনান্য মার্কিন
রাষ্ট্রপতিরা।
তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে ঘটা করে মে মাসের দ্বিতীয়
শুক্রবার মা দিবস হিসাবে পালিত হয়ে আসছিলো।
তাদের দেখাদেখি আমরা পালন করি। তারা অর্চনা
করে, আমরা কী করি?
এখন কী বলবেন?
"ধর্ম যারযার, উৎসব সবার"
এমন বাণী প্রসব করবেন? নাউযুবিল্লাহ।
আর কতো স্রোতে গা ভাসাবেন?
পশ্চিমাদের সংস্কৃতি গিলতে গিলতে তো
এসোফেগাস পর্যন্ত ভরে ফেলেছেন?
বমি করার সময় কি এখনো হয়নি?
যখন কোন উৎসবে ধর্ম চলে আসবে তখন আমাকে
আমার ধর্মই পালন করতে হবে,দ্বিতীয় অপশন নেই।
আমার ধর্ম আমাকে বলছে, "মা বাবার সাথে
সদ্ব্যবহার করো,তাঁদের সাথে সর্বোত্তম আচরণ করো।
প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ, তাঁদের উপর বিরক্ত হওয়ার
অধিকার তোমাকে দেয়া হয় নি। "উফ" শব্দ পর্যন্ত
উচ্চারণ করার সুযোগ নেই। তাঁদের সন্তুষ্টি বা
অসন্তুষ্টির উপর তোমার কল্যাণ-অকল্যাণ নিহিত।
তাঁদের ভরণপোষণ তোমাকেই করতে হবে।"
আমাদের জন্য নির্দিষ্ট দিনের অপেক্ষা করার সুযোগ
আছে,একটি মুহূর্ত মা'কে ভুলে থাকার সুযোগ আছে?
আমরা তো মা'কে বৃদ্ধাশ্রমে রাখার অনুমতি পাইনি?
একলা ঘরে আবদ্ধ করে রাখার বৈধতা পাইনি?
আমাদেরকে প্রতিমুহূর্ত মায়ের চরণে হাত বুলিয়ে
তাঁদের সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করতে হয়। তাহলে
তাদের মতো করে এ দিনে মা'কে নিয়ে এতো কথা
বলছি কেন? অন্যদিন কেন চুপ করে থাকি?
আমাকে তো প্রতিদিন কথা বলতে হবে। বিশেষ
দিনে আবেগের কৌটা খুলে দিলেই মা'র হক আদায়
হবে না, কখনোই না।
ভাবুন! বাহ্যিক ভাবে দুচার লাইন লেখে দায় সারছি
না তো,সাবধান,মা আমার জান্নাত নতুবা জাহান্নাম।
একদিনে সম্মান দেখিয়ে তা আদায় করা যাবে না।
প্রতিটি সেকেন্ড তাঁর বাধ্য সন্তান হতে পারলেই তা
সম্ভব।

Post a Comment

0 Comments